My Blog List

Sunday, March 9, 2025

চাঁদ-জোসনা-আমি


 জানালার পর্দাটা সরাতেই একমুঠো জোছনা ছিটকে এলো মেঝেতে। পরিচ্ছন্ন আর পরিষ্কার আকাশে জ্বলজ্বল করছে আধখানা চাঁদ। ম্যাক্সিম গোর্কির মা উপন্যাসটা হাতে নিয়ে ছাদে উঠে এলাম। চারদিকে জোছনায় প্লাবিত হয়ে আছে। নিস্তব্ধ রাত, হালকা বাতাস, আর মৃদু পাতার খসখস শব্দ—সবকিছু মিলিয়ে এক অপার্থিব অনুভূতি।


চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে ছাদের রেলিং ধরে থাকা মানিপ্ল্যান্টের পাতায়। বাতাসের দোলায় পাতাগুলো যেন রূপালি আভায় জ্বলজ্বল করছে। আমি বইয়ের পাতায় চোখ রাখি, কিন্তু মনে হয়, প্রকৃতি আজ গল্পের চেয়েও বেশি জীবন্ত। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য যেন এই রাতের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাচ্ছে।


এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি হাতে নিয়ে বসি ছাদের এক কোণে। দূরে কোথাও কুকুরের হালকা ডাক শোনা যাচ্ছে, মাঝে মাঝে কোনো রাতজাগা পাখির ডানার শব্দ বাতাসে মিশে যাচ্ছে। জোছনার আলোয় নিজের ছায়াটার দিকে তাকাই, মনে হয়, আমিও কি এক টুকরো গল্প হয়ে গেছি এই রাতের?


বইয়ের পাতা উল্টাই, কিন্তু চোখ বারবার আকাশের দিকে চলে যায়। হয়তো চাঁদও আজ কিছু বলতে চায়, হয়তো এই রাতও কোনো গল্প বুনছে—যে গল্পের নাম ‘অবাক করা নিস্তব্ধতা’, যেখানে চাঁদ, জোছনা, হালকা বাতাস আর একাকী আমি এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়ে আছি...

Saturday, March 8, 2025

অন্ধকার অরণ্য

 


২রা রমাদান-২০২৫। মাগরিবের নামাজপড়ে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। সারাদিন রোজার ক্লান্তিতে, ইফতারের পর পুরো শরীর ঘেমে আসছে। আবাসিক থেকে বেড়িয়ে এলাম খোলা মাঠে।

গোধূলির লালচে আলো ধীরে-ধীরে মলিন হয়ে আসছে। পশ্চিমের আকাশ যেন আগুনের মতো জ্বলছে, আর তার নিচে ছড়িয়ে আছে অস্পষ্ট ধোঁয়াশা। ৫০/৬০ একরে পরিত্যক্ত প্লটগুলোর ভেতর আমি একা। চারপাশে ঝোপঝাড়, জঙ্গল আর ভাঙাচোরা কংক্রিটের স্তূপ পড়ে আছে। যেন বহুদিন কেউ এখানে আসেনি। বাতাস ভারী, নিস্তব্ধতা চারপাশে জমাট বেঁধেছে।


হাঁটতে-হাঁটতে আমি একটা নিচু দেয়ালে হেলান দিয়ে বসি। দূরের 'মেঘনা ফ্রেশ সিমেন্ট ফ্যাক্টরি' আর 'ফ্রেশ সিরামিক্সে' -এর চুল্লিগুলোকে এখন ধোঁয়াশার ভেতর ভাসমান দ্বীপের মতো লাগছে। দু’শ মিটার দূরে মেঘনা নদীর একটা ছোট্ট শাখা এঁকেবেঁকে চলে গেছে। যার পানিতে সন্ধ্যার আলো মিশে এক অদ্ভুত গাঢ় রঙ নিয়েছে।


পাশেই অনেক বড়সড় একটি রেন্ডি গাছ। বিশালাকার কান্ড নিয়ে, মাটির দিকে ঝুলিয়ে আছে। লতাপাতায় ভরপুর। তার নিচে জমাট বেঁধেছে গাঢ় অন্ধকার। থেকে-থেকে পুরো মাঠজুড়ে ঝোপঝাড়ের মাঝে বেড়ে উঠেছে বড়ই গাছ।


হঠাৎ ঝোপের ভেতর থেকে একটা চাপা আওয়াজ শোনা গেল। মনে হলো, যেন কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে, ভারী আর গভীর একটা নিঃশ্বাস। আমি থমকে গেলাম। বাতাসে একটা পোড়া গন্ধ ভেসে এলো—কেমন যেন ভেজা মাটির গন্ধের সঙ্গে মিশে থাকা পোড়া মাংসের মতো!


আমি উঠে দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম, কিছু দূরে একটা উঁচু টীলা দেখে সেখানে বসার জন্য পা বাড়ালাম। ঠিক তখনই, পিছনের ঝোপ থেকে এক হু হু ডাক উঠল! শেয়াল!


আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেল। ঝোপের মধ্যে লালচে দৃষ্টির কয়েকটা জোড়া চোখ জ্বলজ্বল করছে। তাদের শরীর পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে তারা এগিয়ে আসছে—ধীরে, নিঃশব্দে।


আমার বুক ধড়ফড় করে উঠল। দ্রুত পা চালিয়ে সামনের দিকে এগোতেই ডান পাশের আরেকটা ঝোপ থেকে হঠাৎ কয়েকটা শেয়াল একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল। তাদের চিৎকারের ভেতর একটা কর্কশ, অস্বাভাবিক কম্পন আছে—এ যেন শেয়ালের ডাক নয়, যেন কোনো বিকৃত আত্মার আর্তনাদ!


আমি দৌড় দিলাম। পায়ের নিচে শুকনো ডালপালা ভেঙে যেতে লাগল, চারপাশে অন্ধকার ঘন হয়ে আসছে। একবার পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলাম—শুধু শেয়াল নয়, মানুষের মতো অবয়বের কিছু জিনিস ছায়ার ভেতর দাঁড়িয়ে আছে! তারা কি মানুষ? নাকি অন্য কিছু?


পাগলের মতো ছুটতে লাগলাম, কিন্তু আশেপাশের ঝোপঝাড় থেকে যেন আরও আরও অনেক চিৎকার ভেসে আসছে। পায়ের তলায় শুকনো মাটি ধসে যেতে লাগল, আর আমি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। মাথার ঠিক ওপরে একটা শীতল নিঃশ্বাস অনুভব করলাম।


উঠে দাঁড়ানোর আগেই অনুভব করলাম, পেছন থেকে একটা ঠান্ডা হাত আমার কাঁধে পড়েছে…


নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা

জনপ্রিয় আর্টিকেলগুলো দেখুন...

চড়ুইভাতি

  ফেলে আসা কৈশোরের দিনগুলোতে... তখন আমি মাদারীপুরে অধ্যায়নরত ছিলাম। ইংরেজি ২০১৭/১৮ খ্রিস্টাব্দ হবে।  প্রায় ছ'সাতমাস পর গ্রামে গেলাম। আমা...

জনপ্রিয় কলামগুলো দেখুন...