![]() |
বঙ্গ মার্কেট, ঢাকা |
বাইতুল মোকাররমে জুমা পড়ে, মেরাজ ভাইসহ বঙ্গবাজারের দিকে যাচ্ছি। গুগলম্যাপ বেরকরে মেরাজ ভাই বললেন- আযীয ভাই, বঙ্গবাজার একসময় 'হকার্স মার্কেট' ছিলো; সেই থেকে দেশের 'সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের মার্কেট' হয়ে উঠেছিলো। এখানের 'পাইকারি কাপড়' বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে সেল হতো। রোজার প্রথম ভাগেই ব্যবসায়ীরা গুদাম স্টক করে রাখতেন; যা অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ছিলো। রকমারি, বাহারি কাপড়ের প্রাণকেন্দ্র ছিলো এটি। ঈদ উপলক্ষে ভীড় লেগেই থাকতো বঙ্গবাজারে। প্রতিদিন হাজারো ব্যবসায়ী ছুটে আসতো এখানে... মেরাজ ভাইয়ের কথাগুলো শুনছি আর কল্পনায় যেন অবলোকন করছি।
গুলিস্তানের 'সড়ক পাতাল মার্কেট' -এ পৌঁছানোর পর
মেরাজ ভাই বললেন, পাতাল মার্কেট দিয়ে রাস্তার ওপারে যেতে হবে। আমি অবাক হলাম যে, এমন পিচঢালা কংক্রিটের রাস্তার নীচে কিভাবে শতো শতো দোকান সাজানো হয়েছে! কৌতুহলী চোখজোড়া নিয়ে পাতালপুরীতে ডুবলাম। নীচে নামার পর মনেহওয়া তো দূরের কথা কল্পনাও হলো না যে, এই মার্কেটের উপরে শতো শতো বাস ও ট্রাক অবিরাম ছুটছে...
গুলিস্তান ফ্লাইওভারের মোড় ঘুরতেই কাপড়পোড়ার ঝাঝাঁলো গন্ধ শুকতে পেলাম। সামনে যতোই এগুচ্ছি গন্ধটা যেন তীব্রতর হয়ে আসছে। সেই সাথে উৎসুক জনতার ভীড়ও বেড়ে যাচ্ছে। মেরাজ ভাই কথা থামিয়ে বললেন, আযীয ভাই! কাপড় পোড়ার গন্ধ পাচ্ছেন? আমিও ঝটপট বলে ফেললুম, হ্যাঁ পাচ্ছি। তবে গন্ধটা যেন কাপড় পোড়ার নয়- থোকা থোকা স্বপ্ন পোড়ার গন্ধ! ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের লাল বিল্ডিংটা চোখেপড়ল। ডানদিকে তাকাতেই- পোড়া টিন ও ইটের স্তূপ দেখতে পেলাম। তিনদিন পূর্বের আগুনে আজও ধোঁয়া উড়ছে! কালো ধোঁয়ায় পাশের বিল্ডিংগুলোও কালো হয়ে গেছে। কাপড় পোড়ার ঝাঝাঁলো ধোঁয়ায় চোখগুলো আলতো জলছে। ঠোঁটের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা মুচকি হাসিটা নিমিষেই বিলীন হয়ে গেলো। দু'দিন আগে ব্যবসায়ীদের বুকফাঁটা আর্তনাদ মনে নাড়া দিলো। সাংবাদিকদের সাক্ষাতকারে- 'ভেঙেপড়া অসংখ্য ব্যবসায়ী'র স্মৃতিগুলো, হৃদয়পটে একেরপর এক ভাষতে লাগলো। কালোপ্রতীকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের শোকপ্রকাশ ও দাবী জানিয়ে কতগুলো ব্যনার সাটাঁনো আছে। পাশেই এনেক্সকো টাওয়ার। শতো শতো উৎসুক জনতা নির্বাক তাকিয়ে আছে। প্রতিটি চোখ যেন শোকাবহ। কতশতো স্বপ্ন আর কতশতো চোখের জল এখানেই হারিয়ে গেছে। ভিতরটা দেখতে চাইলাম; কিন্তু জনস্রোত ডিঙ্গাতে পারলাম না। টিনের বেড়ায় উঁকি দিয়ে ভিতরে তাকালাম- ধ্বংসস্তূপ কাপড় ও টিনের স্তূপ ছাড়া কিছুই পেলাম না। এখনও সেই ধ্বংসাবশেষ টিলাগুলো থেকে স্বপ্ন পোড়ার কালো ধোঁয়া বেরুচ্ছে আর হাওয়ার সাথে মিশে যাচ্ছে শতো শতো দীর্ঘশ্বাস!
সাত/এপ্রিল/তেইশ
No comments:
Post a Comment