My Blog List

Tuesday, September 12, 2023

তাড়াহুড়ো নয়, ধীরস্থির হউন!

বার্ষিক পরীক্ষার দিনগুলো...


বার্ষিক পরিক্ষা চলছে।

মাগরীবের নামাজ পড়ে পড়তে বসেছি। কয়েকপৃষ্ঠা পাতা উল্টানোর পর, মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না। খুব ঘুম ঘুম লাগতেছে। একটু পড়তেছি তো ঝিমুচ্ছি। শরীরটা ঘর্মাক্ত হয়ে উঠেছে। কপালে ঝিরিঝিরি ঘাম জমতেছে। কি পড়তেছি নিজেও বুঝতেছি না। চোখ দু'টো নিজ থেকেই বুজে আসতেছে। ভাবলাম, এশা পর্যন্ত একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক্। এশার নামাজ পড়েই পড়তে বসবো। এলার্ম-ঘড়িটা কানের কাছে নিয়ে শুয়ে পড়লাম।


...ক্রিংক্রিংক্রিং

তাড়াহুড়ো করে এশার নামাজ পড়ে, পড়ার টেবিলে আসলাম। যারপরনাই আগ্রহ ও মনোযোগ দিয়ে পড়তেছি। সবেমাত্র দু'একপৃষ্ঠা পড়েছি কি-না- ঝিমুনি যেন ঝাপটে ধরতে চাচ্ছে। লম্বা একটা হাই তুলে- টেবিলের পার্শ্বে রাখা মামপটের পানিগুলো, কয়েক ঢোকে গিলে নিলাম। পাঞ্জাবীর হাতা মুড়িয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। বইয়ের কালো হরফগুলো ঝাপসা লাগতেছে। চশমার গ্লাসগুলো মুছে নিয়ে নবোদ্দমে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। দু'পৃষ্ঠা পড়লাম কি-না... (!)

বইয়ের পাতাগুলো অস্পষ্ট লাগছে। শরীরটা ক্রমশঃ ছাড়িয়ে দিচ্ছে। চক্ষুদ্বয় বুজিয়ে আসছে। পুরো শরীর ঘেমে যাচ্ছে। 

একটু নড়েচড়ে বসলাম। কপাল ভাঁজ করে পূর্ণোদ্দমে পড়ার চেষ্টা করছি কিন্তু চোখদুটো আপনার থেকেই বুজে আসতেছে। পূর্বের তুলনায় এবারের ঘুমটা প্রবল হয়ে উঠছে। ঝিমুনি যেন তীব্রতর হয়ে আসছে। শরীরের সর্বশক্তি যেন ক্ষয়ে গেছে। চোখ মেলানোর শক্তিটাও যেন লোপ পেয়েছে। 

খোলা বইয়ের উপর চশমাটা রেখে, ইকবালকে বললাম-

বিছানায় গেলাম। ১১ টায় ডেকে দিস্।

এলার্ম-ঘড়িটা কানের কাছে নিয়ে শুয়ে পড়লাম।


ঘন্টা দেড়েক ঘুমানোর পর...

কাত পাল্টাতে গিয়ে- নাফিস ও নেহালের পড়ার আওয়াজে লাফিয়ে উঠলাম। গায়ে জড়িয়ে নেয়া চাঁদরটা ছুড়েমেরে- ওয়াশরুমে গেলাম। চোখেমুখে পানি দিয়ে পড়ার টেবিলে আসলাম। চশমাটা চোখে নিয়ে- মামপটের অবশিষ্ট পানিটুকু চুমুকেই শেষ করলাম।

এবার বইয়ের পাতা উল্টিয়ে নবোদ্যমে-পড়তে বসলাম।

রাত ১১টা, ১২টা, ১টা, ২টা...

পড়তেছি ,পড়তেছি আর পড়তেছি। একটু ঝিমুচ্ছি তো পানি গিলতেছি আবার পড়তেছি। কখনোবা বইটা হাতে নিয়ে পায়চারী করতেছি আর পড়তেছি। ঘন্টার কাঁটা যখন ৪ এর কোটা ছুঁয়েছে; মাথায় যেন নতুন করে কিছুই ঢুকছে না। বইয়ের পাতা উল্টানোর মতো শক্তিও পাচ্ছি না। ভীষণ ক্লান্তিনুভাব করতে লাগলাম। বইটা হাতে নিয়ে বিছানায় গেলাম। শুয়ে শুয়ে কয়েক লাইন পড়লাম কি-না... (!)

ফজরের আজানে চোখ মেললাম। চশমাটা চোখে আর বইটা বুকের উপর পড়ে আছে। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম। ভাগ্যিস, কাত পাল্টাইনি আর চশমাটারও কিছু হয় নি! 

ফজরের নামাজের পর...

এককাপ চা সাথে নিয়ে, পাঞ্জাবীর হাতা মুড়িয়ে পড়তে বসলাম। বেশ মনোযোগী মন নিয়ে পড়তেছি। আধাপৃষ্ঠা পড়েছি কি-না(!) রাতের ন্যায় ঘুম ঘুম ভাব লাগতেছে।  চোখ যেন মেলতেই পারছি না। শরীরটা যেন মুষড়ে যাচ্ছে। ঝিমুনী যেন প্রবল হয়ে আসছে। অল্পক্ষণের জন্য বইয়ের উপর মাথাটা ঠেকিয়ে দিলাম। 

তা র প র...

কি এক শব্দে মাথাটা তুলতেই দেখি- ওমা! ৭:৩০ পেরিয়ে গেছে! ৮:৩০-এ পরিক্ষা। পা দু'টো ঝিন ধরে আছে। চা-টা ঠাণ্ডা শরবত হয়ে গেছে! সকালের খাবার প্লেটে বেড়ে দিয়েছে। দু'দিন থেকে গোসল না করায়, মাথাটা ভাড় হয়ে আছে। এদিকে আরও ১৫/২০ পৃষ্ঠা পড়া বাকি আছে! এই অল্পসময়ে কী করবো ভেবে পাচ্ছি না! রাস্তায় আবার জ্যাম- এখন বের না হলে যথাসময়ে হলে ঢুকতে পারবো না।

কোনভাবে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে, বইটা বিছানায় মেলিয়ে রেখে, পড়তেছি আর জামা পাল্টাচ্ছি। আসাদ ভাই বললেন, খাবার খাবেন না? না খেয়েই যাবেন?

: সময় নেই। ৮ পেরিয়ে গেছে।-বলেই বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তা পার হতে যাবো- ট্রাফিক মহোদয় বিশাল বড় সিগন্যাল টেনে দিলো! মাননীয় ট্রাফিক মামার ইশারায় খানিক দাঁড়িয়ে থেকে; হাতঘড়িটাতে চোখ পড়তেই দেখি- ৮:১৫ বেজে গেছে! মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল! কোনমতে রাস্তাটা পেরিয়েই ৬০ কি.মি বেগে ছুটতে লাগলাম! পরিক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেখি ৮:৪৪ বেজে গেছে! বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। ৬ তালা ভবনের ৫ম তলায় আমাদের পরিক্ষার হল্। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেছি আর কি যেন ভাবতেছি।


পরিক্ষার হলে...

সচ্ছ কাচের দরজায় ধাক্কা দিতেই শতখানেক জোড়া জোড়া চোখ আমাকে ফোকাস করলো। পিনপতন নীরবতা। সবাই উত্তরপত্র ফিলআপ করতেছে। সীটে যাওয়ার আগেই হল্ সুপার ছুটে এলো। কপাল ভাঁজ করে, ফিসফিসিয়ে বললো- তুমি কি পরিক্ষার্থী?

: জ্বী স্যার। 

বলে, এডমিট কার্ডটা শো করলাম। কয়েকনজর তাকিয়ে চোখজোড়া বড়সড় করে বললো- 

ক'টা বাজে! দেরি কেন? 

: স্যার বুঝতে পারিনি। ঘুমিয়ে পড়েছিলুম।

: দাঁড়িয়ে থাকো এখানে ২০ মিনিট।

এরপর বিড়বিড়িয়ে কিছু বলে চলে গেলেন। উপায়ন্তর না পেয়ে, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে, দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় দেড়শতাধিক পরিক্ষার্থীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সকলেই নিজ লেখনীতে ব্যাস্ত। মাথাতুলে আমার দিকে তাকানোর মতো কারো মুড নেই। খুব অসহ্য লাগতেছে। আমার পার্শ্বের সীটে আসীন- মাহবুব ভাই হাত উঁচিয়ে কি যেন বোঝাতে চাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। ২০ মিনিট পেরিয়ে গেছে। হলসুপার প্রশ্নসমেত উত্তরপত্র দিয়ে বললেন- আগামীকাল থেকে দেরি হলে স্বাক্ষর করতে দেয়া হবে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুচকি হাসি টেনে, মাথা দুলিয়ে, সম্মতি দিয়ে সীটে আসলাম।


রোল ও নিবন্ধন নম্বর লেখার পর...

প্রশ্নপত্রে চোখ পড়তেই মনটা ভরে গেলো- প্রথম প্রশ্ন দু'টি কমন পরেছে। বাকিগুলো চিরুনী অভিযান দিয়েও মনে করতে পারছি না। প্রথম দু'টির উত্তর লেখা শুরু করলাম। অর্ধেক লিখেছি হয়তো। চোখদুটো যেন চিনচিন করছে। প্রতিটা অক্ষর ডাবল-ডাবল লাগছে। কলমটা যেন হাত থেকে খশে যাচ্ছে। চোখদুটো বড় করে, কপালে ভাঁজ টেনে- লেখার চেষ্টা করেও ঝিমিয়ে পড়তেছি। মাহবুব ভাই ফিসফিসিয়ে বললো, আহমেদ ভাই! হল্ সুপার আপনাকে ফলো করতেছে। ঘুমায়েন না। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে, চোখদুটো ডলে নিলাম। উত্তরপত্রে তাকিয়ে দেখি, একি! উপর-নীচ বরাবর খাড়া-খাড়া কলমের টান! ডানেবামে আরোও কয়েকটা কলমের আঁচড়! হল্ সুপার এতোক্ষণে কাছে এসেছে। আমার খাতাটি দেখে চোখদুটো কপালে তুলে বললো, এসব কি? আমি কিছুই বলতে পারলাম না। উনি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম। ঘুমের তীব্র ঝিমুনিতে এমনটা হয়েছে। ভাগ্যিস, সাদা খালি পাতাটায় এমন হয়েছে। পাতাটা খুলতে যাবো, মাইক্রোফোনে ভেষে এলো- এখন সময় ১১:৩০...আর মাত্র আধাঘণ্টা সময় অবশিষ্ট আছে...

আমি যেন পিলে চমকে গেলাম। তাড়াহুড়ো করে যা যা মনে আসে লিখতে লাগলাম। যতদূর মনে আছে, প্রথম প্রশ্ন দু'টো পুরোপুরি কমপ্লিট করেছি। তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর লিখতে যাবো, হল্ সুপার আমার খাতাটি টেনে নিয়ে গেছে।


হল্ থেকে বেরিয়ে আসার পর...

মাহবুব, জাবের আর আমার বরাবর পিছনের সীটে বসা নুরুল ইসলাম ভাই বললেন- আহমেদ ভাই, আপনার শরীর ঠিক আছে তো! নতুবা আজ এক্সাম হলে এতোটা ঘুম পেলো আপনার! আবার সবার শেষে হলে ঢুকলেন। পরিক্ষা কেমন হলো আপনার? সকলেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। 

আমি পুরো কাহিনিটা খুলে বললে, তারা হো হো করে হেসে উঠলো। জাবের ভাই বললেন, তারও নাকি এমনটা হয়েছে কয়েকবার। মাহবুব ও নুরু ভাইয়েরও নাকি এমন হয়েছে এখন আর অনিয়ম করে না। ওদের বিদায় দেয়ার পর, রাস্তা পার হলাম। খিদা, তৃষ্ণা আর ঘুমে যেন ভেঙে পরে যাচ্ছি।

বুঝলাম- গত সন্ধ্যা, রাত, সকাল ও সকাল গড়িয়ে দুপুর অব্দি, কিছু না খেয়ে- অনাহারে থাকায় শরীরে কোনরকম বল্ পাচ্ছি না। পাশাপাশি সারাটা রাত অনিয়মে কাটানোর ফলে- ঘুমার অসহনীয় চাপ কেটে উঠতে পারছি না।


আটাশ/দুই/তেইশ


Ahmed Aziz 's diary 

-থেকে সংগ্রহীত

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় আর্টিকেলগুলো দেখুন...

চড়ুইভাতি

  ফেলে আসা কৈশোরের দিনগুলোতে... তখন আমি মাদারীপুরে অধ্যায়নরত ছিলাম। ইংরেজি ২০১৭/১৮ খ্রিস্টাব্দ হবে।  প্রায় ছ'সাতমাস পর গ্রামে গেলাম। আমা...

জনপ্রিয় কলামগুলো দেখুন...